অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করার কারণে হতে পারে যে ধরনের সমস্যা, অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করার কারণে নানা রকমের সমস্যা হতে পারে।যেমন আমরা সবাই মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন কম বেশি করে রাখি এবং এরপর আমরা আমাদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকি।আর এই মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন এর কারণে নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয় শুধু তাই  নয় এতে  মনের ক্ষতি হয়।আর আমাদের অজান্তেই মোবাইলের অদৃশ্য তরঙ্গ পাল্টে দেয় দেহ-মনের রসায়ন।এসব গবেষণা বা সমীক্ষা নিয়ে ভিন্ন মত থাকতেই পারে।তবে মোবাইল ব্যবহারের করার আগে বেশ কিছু সাবধানতা গ্রহণ করা অবশ্য কর্তব্য সে ব্যাপারে সবাই একমত।তবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা নিয়ে কিছু বক্তব্য এখানে প্রশ্ন এবং উত্তরের মাধ্যমে এখানে তুলে ধরা হলো; যেমন,

মোবাইল ফোন থেকে শরীরে সমস্যা তৈরি হয় যেভাবে?

মোবাইল ফোনের এক প্রান্তের বার্তা অন্য প্রান্তে পৌঁছানোর কাজটি ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশনের মাধ্যমে বলা হয়।আর সমস্যা হলো, এই ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন মানব শরীরেও গৃহীত হয়।তবে সাধারণত মোবাইলের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশেনের মাত্রা ৪৫০ থেকে ৩৮০০ মেগাহার্টজের মধ্যে থাকে।

এবার প্রশ্ন হলো, ঠিক কতটা পরিমাণ,

মোবাইল ফোনের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন শরীরের গৃহীত হলে এতে সমস্যা সৃষ্টি করে?আর এর উত্তর হলো, ঠিক যতটা পরিমাণ রেডিয়েশন থেকে শরীরের কেমিক্যাল বন্ড ভেঙে যায় বা শরীরের মধ্যে আয়োনাইজিং এফেক্ট তৈরি হয়।এর এই বিষয়টিকে একটু বুঝিয়ে বলা যাক, আসলে আমাদের শরীরের সমস্তটাই রাসায়নিক পদ্ধতিতে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত।আর মাত্রা অতিরিক্ত থাকায় মোবাইল ফোনের  ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন শরীরের রাসায়নিক বন্ধন ভেঙে ফেলতে সক্ষম। আবার রেডিয়েশনের মাধ্যমে শরীরে আয়োনাইজিং এফেক্ট তৈরি হলেও কোষের মধ্যে হঠাৎ পরিবর্তন আসে।আর তৈরি হয় নানা বিধি শারীরিক সমস্যা।

মোবাইল ফোনের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন মানুষের ক্ষতি করতে পারে বলে প্রাথমিক পর্যায়ে মোবাইলের স্রষ্টারা বিশ্বাসই করতেন না।আর তাদের যুক্তি ছিল, মোবাইল ফোন থেকে এতো সামান্য পরিমাণে রেডিয়েশন উৎপন্ন হয় যে তা শরীরে কোন ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে না।বর্তমান বিভিন্ন গবেষণায় অত্যধিক মোবাইল ফোন  ব্যবহারের বিভিন্ন ক্ষতিকর শারীরিক প্রভাব গুলি নিয়ে নানা মতামত উঠে আসছে।

কি কি সমস্যা হয়?

বিভিন্ন গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মোবাইল ফোন থেকে মানবশরীরে ঘটে যাওয়া নেতিবাচক প্রভাবগুলোকে দু’ভাবে চিহ্নিত করা যায়। প্রথমটি হলো ছোটদের উপর প্রভাব। আর দ্বিতীয়টি প্রাপ্তবয়স্কদের উপর প্রভাব। এবার ছোটদের উপর ক্ষতিকর প্রভাবের প্রশ্নে বলা যাক, প্রাপ্ত বয়স্কদের তুলনায় ছোটদের শরীরে ৬০ শতাংশ বেশি হারে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন গৃহীত হয় বলে গবেষণায় দেখা গেছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ছোটদের মস্তিষ্কের হাড় এবং সফ্‌ট টিস্যু সরু এবং পাতলা হওয়ার জন্যই প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ রেডিয়েশন গৃহীত হয়। তাই এটা সহজেই অনুমেয় যে মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব বড়দের তুলনায় ছোটদের অনেক বেশি।

ছোটদের মধ্যে অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের মুখ্য সমস্যা হলো লার্নিং ইম্পেয়ারমেন্ট। জটিল এই সমস্যায় ছোটদের নতুন কিছু শেখার আগ্রহ এবং ক্ষমতা দুই-ই কমে আসে ।অনেক বাচ্চাই শুয়ে-বসে বিভিন্ন ভুল শারীরিক কায়দায় মোবাইল ব্যবহার করে। এভাবে ব্যবহারে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা হওয়ায় আশঙ্কা থাকে।তবে দীর্ঘ সময় মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে চোখ রাখার জন্য মাথা ব্যথার সমস্যা হওয়ারও আশঙ্কা থাকে,আবার রাতে মোবাইল ফোন ব্যবহার করার কারণে ঘুমের সমস্যা হয়।

বেশি সময় ধরে কথা বলে কান ও গরম হয়ে যায়।বেশি সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার এর কারণে ক্লান্তি এবং দুর্বলতাও আসতে পারে।এবং দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থাকে অনেকটাই।তবে বড়দের ক্ষেত্রে তালিকা প্রথমেই রয়েছে মাথা ব্যথা।আর তার পাশাপাশি দীর্ঘ সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করার কারণে ঘুমের সমস্যা, ও দুশ্চিন্তা এবং উত্তেজনা বৃদ্ধির মতো সমস্যা হামেশাই ঘটে।তাছাড়াও মোবাইল ফোন  ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার কারণ হয়ে ও দাঁড়ায়।তার কারণ হলো মোবাইল ফোন কানে দিয়ে যদি সে রাস্তা পারাপার এবং  যদি সে মোবাইল ফোন কানে দিয়ে রেল লাইন ও পার হয় বা গাড়ি চালালে সময় ও যদি সে তার মোবাইল ফোনে কথা বলে বা সে যদি তার কানে মোবাইল ফোন রেখে গাড়ি চালায় তাহলে  যে কোনো মুহূর্তে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে পারে।

আবার বেশ কিছু গবেষণায় মোবাইল ফোনের বেশি ব্যবহারের সঙ্গে ক্যান্সার এবং প্রজননের অক্ষমতার দিকেও নির্দেশ করা হয়েছে। এখানে বলা দরকার, ইতিমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু’ মোবাইল রেডিয়েশনকে ‘প্রোবাবেল কার্সিনোজেনিক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। অর্থাৎ মোবাইলের রেডিয়েশন থেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার একটা আশঙ্কা রয়েছে বলেই সংস্থার মতামত। তবে এই বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত নেই।

কি করলে ভালো হয়?

আবার বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল থেকে এটা পরিষ্কার যে সুস্থ শরীর বাঁচতে মোবাইল ফোন ব্যবহার কমানোই একমাত্র উপায়।তবে ঠিক কতটা কমালে ভালো হয়?এর উত্তরে, যদি একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এবং তার সারা দিনে ৩০ মিনিটের বেশি ফোনে কথা বলা ঠিক নয়। আবার ১৮ বছর বয়সের নিচে হলে ফোনে কথা বলার সময়টা সারা দিনে ২০ মিনিটের মধ্যে রাখাই ভালো।

১. তবে সর্বপ্রথমে মোবাইল কেনার আগে অবশ্যই মোবাইল ফোনের স্পেসিফিক অ্যাবসর্পশন রেট বা সার ভ্যালু সম্বন্ধে জেনে নিন।আর বর্তমান সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সব মোবাইল ফোনের ওই মূল্য উল্লেখিত থাকে।

২. মোবাইল ফোনটিকে শরীর থেকে অন্তত ২০ সেন্টিমিটার দূরে সরিয়ে রাখতে হবে অবশ্যই তাহলে রেডিয়েশনের প্রভাব তেমন একটা বেশি পড়বে না তখন কম পড়বে।

৩. তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো যে আপনি যখন মোবাইল ব্যবহারন তখন যদি টাওয়ারের সিগন্যাল কম থাকলে। তাহলে অটোমেটিক আপনার মোবাইল ফোনের রেডিয়েশনের প্রভাব তখন অনেকটাই বেড়ে যাবে।তাই এমন সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার না করাই অনেক ভালো।

৪. রাতে মোবাইল ফোন ব্যবহার ঘুমের সমস্যার প্রধান কারণ। তাই কোনোভাবেই রাতে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। ঘুমানোর সময় মোবাইল ফোন শরীর থেকে অনেকটা দূরে রেখে শোওয়াই ভালো। পারলে ঘুমের সময় মোবাইল বন্ধ বা সাইলেন্ট মোডে রাখুন।

৫. মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সময়ে সঠিক ভাবে দেহভঙ্গি বজায় রেখে আপনি আপনার মোবাইল ফোনে কথা বলবেন।তবে বেঁকে-টেরে বসে এবং শুয়ে কথা না বলাই অনেক ভালো।

৬. তবে দীর্ঘ সময় মোবাইল ফোন কানে না রেখে এর বদলে হেডফোন ব্যবহার করা করতে পারবেন।তবে হেডফোনের বেশি ব্যবহার আবার কানের নানাবিধ ক্ষতি করে।এক্ষেত্রে আপনাকে বুঝে শুনে চলতে হবে।

৭. মোবাইল ফোনে চোখ রেখে বা কথা বলতে বলতে অন্য কাজ না করাই অনেক ভালো।

৮. মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে করতে রাস্তায় হাঁটা, রেললাইন পারাপার, রাস্তা পার, গাড়ি চালানো একেবারেই ঠিক নয়।

৯. আবার ছোটদের উপর মোবাইল ফোনের  খারাপ প্রভাবকে লক্ষ করে বলা যায়, বয়সের গণ্ডি ১৮ না পেরনো পর্যন্ত মোবাইল ফোন  ব্যবহার না করাই উচিত।

তো আশা করি আপনারা সবাই বুঝতে পারছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.